Monday, August 17, 2009

রক্তি একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করে। শিক্ষা জীবনে সে জীববিজ্ঞানের উপর অনার্স সহ মাষ্টার্স শেষ করে এই চাকুরীতে জয়েন্ট করেছিল। তাও আজ পাঁচ-ছয় বছেরর কথা এখন পর্যন্ত সে অন্য কোন ফার্মে কিংবা সরকারী চাকরীর জন্য দরখাস্ত করেনি। কারণ একটাই এখানে যথেষ্ট স্বাধীনতা আছে নিজের মনের মত করে কাজ করা যায়। পোশাকে আশাকে কথাবর্তায় সে আধুনিকা আর এতে তার শিক্ষার প্রভাব যথেষ্ট পরিমাণ আছে। গায়ের রং কালো ঠিক কালো নয় তেল তেলে কালো। রোদ্রে যখন বের হয় তখন তার চেহারা চকচক করে আর বেশীর ভাগ পুরুষই তার দিকে তাকিয়ে থাকে, সে তাদের চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত। চোখগুলো স্পঞ্জ মিষ্টির মত সাদা , মায়াবী মুখ দেখলে সত্যিই চোখ ফেরানো যায় না। রক্তি কথা খুব কম বলে আর তাতে তাকে অহংকারী বলে মনে হয় আসলে সে আড্ডা দিতে ভালোবাসে। যে কোন পরিস্থিতি সে উদার মনে গ্রহণ করার মানসিকতা আছে যা আধুনিকা বলেই সম্ভব। আর এখনকার সময়ে প্রাচীন রমণীদের মত ঘরে বন্ধী হয়ে থাকাটাও সে ছোট বেলা থেকে আজ অব্ধি পায়নি। চাকরীতে জয়েন্ট করার পরেই তার বিয়ে হয় রাব্বির সাথে। রাব্বী রোড এন্ড হাইওয়ের এক্সিকিউটিব ইঞ্জিনিয়ার। তার বেতন আর উপরী কামাই যা হয় তাতে তাদের সংসার খুব ভালো ভাবে চলে। রক্তি রাব্বীকে খুব কম সময়ের জন্য কাছে পায় বেশীর ভাগ সময় সাইডের কাজ দেখাশোনার জন্য যায়। রাব্বী অফিসে যাওয়ার সময় ওকে গাড়ীতে করে অফিসে নামিয়ে দিয়ে যায়। আর ফিরতে ফিরতে রাত্রি বারটা একটা।তুমি সকালে বের হয়ে যাও আর আস একটার দিকে এতই যখন ব্যস্ততা তাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেন?বিয়েটা হচ্ছে জীবনের একটা অংশ তা না হলে তো আমরা সমাজে টিকতে পারবো না। কিংবা সমাজের একটা অংশ হতে পারবো না।তাহলে তোমার প্রকৌশলী না হয়ে সমাজ সেবক হলে ভাল হত।আসলে মানুষের জীবনে তো কিছু অপূর্ণতা থাকে তার ভিতরে আমার সমাজসেবক না হয়ে প্রকৌশলী হওয়া একটা অপূর্ণতা। তোমার সাথে এই অসময়ে ঝগড়া করতে চাই না। খাবার থাকলে দিবে তা নাহলে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ব।টেবিলে খাবার দেয়া আছে খেয়ে নাও। আমি উঠে খাবার দিতে পারব না। তুমি যেমন কাজ কর আমিও তেমনি কাজ করি। তোমার কাজের মূল্য আছে আর আমার কাজের কোন মূল্য নেই।অবশ্যই আছে আর এজন্যই তো তোমাকে ঘরের কাজের ব্যপারে কোন প্রেসার দিই না। আমি যতটুকু পারি নিজেই করতে চেষ্টা করি।যাবার সময় লাইটটা নিবিয়ে দিয়ে যেও। আর আমি ঘুমালে আমাকে জাগিও না, জাগালে আমার মাথা ধরবে হয়ত সারারাত আর মাথা ধরা সারবে না।ঠিক আছে।পরের দিন গাড়ীতে যেতে যেতে রাব্বীর সাথে দু’একটা ফর্মাল আলাপ হয় তার ভিতরে ভালবাসার স্বাদ পায় না।একটা ছেলেকে দেখে রক্তি চমকে ওঠে। কলেজের গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে ছেলেটি। ছেলেটিকে রক্তির চেনাচেনা মনে হয়। ওদের পারাতেই কি থাকত বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর স্বামীর বাসাতে আসার পর ওকে দেখিনি। সেই কিশোর বয়স থেকে যৌবন তাকে এত আকর্ষণী করে দিয়েছে ভালভাবে না দেখলে বোঝা যায় না। ছেলেটির কাধে কোন ব্যাগ বা হাতে কোন খাতা নেই। ছেলেটির নাম মনে করার চেষ্টা করল রক্তি। স্মৃতির পাতা হাতরাতে লাগল ওলট পালট করে ফেলল স্মৃতির হার্ডডিক্স। রাব্বির কথা শুনে বাস্তবে ফিরে আসল।কি হলো অফিস তো এসে গেছে নামবে না।হ্যা নামিয়ে দিয়ে যাও।অফিসে গেল ঠিকই কিন্তু ছেলেটির নাম মনে করতে না পারাতে স্বস্তি পাচ্ছেনা। অফিসের কাজেও মন বসছিল না। কি আছে ঐ ছেলেটির মধ্যে যা আমার সকল কিছু ওলট পালট করে দিয়েছে। আগে কখনও তো এমন হয়নি কত দেখেছি ওকে। কলেজে যাওয়ার পথে তো প্রায়ই দেখা হত ওর মার হাত ধরে স্কুলে যেত । আস্তে আস্তে মনে পরছে ওরা থাকতো টিন সেডের একটা বাড়ীতে ওর বাবা প্রাইভেট মাক্রোবাস চালাতো। হ্যা মনে পড়েছে ওর নাম রনি। রনিরা দুই ভাই একবোন। কলেজ ছুটি হয় বিকাল চারটায় আর রক্তির অফিস ছুটি হয় পাঁচটায় তাই সে একঘন্টা আগে অফিস থেকে বের হয়ে কলেজের সামনে আসে। ছেলেমেয়ে একসাথে বের হেচ্ছে কেউ আবার কলেজের বাসে করে যার যার বাসার দিকে যাচ্ছে। এই ভীড়ের মধ্যে রক্তি সেই ছেলেটিকে খুঁজে পায় না।হাই ম্যাম আপনি কি কাউকে খুঁজছেন। আমি আপনার কোন প্রয়োজনে লাগতে পারি।রক্তি ছেলেটিকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে ওঠে। হ্যাঁ আমি একজনকে খুঁজছিলাম, হয়ত সে বেরিয়ে গেছে। তোমার নাম কি?আমার নাম রনি।আপনার নাম জানতে পারি।আমার নাম রক্তি।তুমি কিসে পড়।আমি কম্পিউটার সাইন্সে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি।খুব ভাল। আমিও এই কলেজের ছাত্রী ছিলাম।এই জায়গায় দাড়িয়ে কথা না বলে চলেন ঐ ক্যাফেতে গিয়ে বসে কথাও বলা যাবে আর কফিও খাওয়া যাবে।ঠিক আছে চল। তোমার বাবা কি করেন।আমার বাবা মাক্রোবাস চালান। পেশায় একজন ড্রাইভার।তোমাদের বাড়ী কোথায়।চকফরিদ জামিল মাদ্রাসার পশ্চিমে।আমার বাবার বাড়িও তো ওখানে।কালাম ভাই কি তোমার বাবা।হ্যা, তিনিই আমার বাবা।আমার যখন বিয়ে হয় তখন তুমি ছোট ছিলে। তাই তুমি আমাকে চিনতে পারনি আর আমিও তোমাকে চিনতে পারিনি।তোমার পোশাক এমন ক্যানো এক রঙের আর পিচ্ছিল।কেনো দেখতে খারাপ লাগছে।না তা ঠিক নয়। আমাদের সময় কলেজের ইউনিফর্ম ছিল অন্য রকম।ঠিক বলেছেন। আমাদের ইউনিফর্ম ন্যানো সুতায় বোনা পোড়ে খুবই মজা দেখতেও সুন্দর আর হাল্কা। আমাদের কলেজ থেকে এই ইউনিফর্ম সকল ছাত্র/ছাত্রীকে ফ্রী দেওয়া হয়েছে। এটা ধুতে হয়না আবার কালার চেঞ্জ হয়, না খুললেও চলে। আমিতো অন্য কোন কাপড় ব্যবহার করি না। এটাই সব সময় ব্যবহার করি কিন্তু কলেজের সময় শুধু এর রং পরিবর্তন করে সাদা করে নেই। আমরা সবাই তাই করি।রক্তির নিজের দামী পোশাকটার দিকে তাকিয়ে মনখারাপ হয়ে গেল। বেশী দিন আর এই ধরনের কাপড়ের মূল্য থাকবে না।আচ্ছা আমি আপনাকে কি বলে ডাকব?তোমার যা ভাল তাই বলে ডেকে।ওয়েটার দুইটা বার্গার আর দুইটা কোল্ড গ্রীন টি। আর কিছু খাবেন মিসেস রক্তি।না, ওতেই চলবে।আমি তাহলে আপনাকে রক্তি বলে ডাকবো।ঠিক আছে। তোমার ফোন নাম্বারটা দিবে না।আমি তো মোবাইল ব্যবহার করি না।তাহলে তুমি সবার সাথে যোগাযোগ কর কেমন করে।কম্পিউটারের সাহায্যে। আপনার বাসায় ইন্টারনেট নাই।না কম্পিউটার আছে কিন্তু ইন্টারনেটের লাইন নেওয়া হয়নি।লাইন নিতে হবে না। এই চিপটা নিন কম্পিউটারের বাহিরের পোর্টে লাগিয়ে নিবেন তাহলেই আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারব।ঠিক আছে তোমার সাথে আবার কখন দেখা হবে।আপনি যখন চাইবেন তখনই দেখা করব।রক্তি আর রনি প্রায়ই বাইরে বেড়াতে যায় করতোয়া নদীর পাড়ে, নদীটি যেন পৌরসভার ট্রেনের মত মনে হয়। কালো পানি আর ময়লা আবর্জনায় ভর্তি। তার পরেও খারাপ লাগে না ওদের কাছে। হারিয়ে যায় একে অপরে গভীর আনন্দের ভূবনে। যেখানে ভালবাসা পরিপূর্ণ জগত আছে। বয়স যেখানে কোন পরিমাপের বিষয় নয়। পরিবেশ পরিস্থিতি কিছুই তাদের আটকাতে পারে না। ঐ জগতে শুধু মন আর হৃদয়ের মূল্য আছে বাকী সবই তার কাছে নগন্য।রক্তি তুমি আর আমি মিলে এই পৃথিবীটাকে বদলাতে পারি না। দেখনা নদীটার অবস্থা কত করুণ। আধুনিকতার নামের কি জঘন্য পরিহাস পরিবেশের সাথে।তার মানে, আধুনিকতা কি ক্ষতি করেছে। তাহলে কি তুমি আধুনিক নও?আধুনিক কিনা জানিনা? আধুনিকতার নষ্টতা আমাকে কষ্ট দেয়। তাই এই কথা বলছি।আধুনিক যুগ না আসলে তোমার কম্পিউটার সাইন্স পড়া হতো না।তা ঠিক তাই বলেতো আর আধুনিকতার নষ্ট দিকগুলো মেনে চলতে পারি না। কিংবা আধুনিকতা থেকে যদি এমন কোন যুগ আসে যা আধুনিকতা থেকে ভাল তাকে আমরা গ্রহণ করব না।গ্রহণ করতে সাহসের দরকার আর তা একা একা গ্রহণ করা সম্ভব না।তুমি যদি আমার পাশে থাক তাহলে আমি তা করে দেখাতে পারি। তুমি শুধু আমাকে সাহস আর আশা যোগাবে।চল যাই সন্ধ্যা হয়ে আসছে। রাত্রে কম্পিউটারে দেখা হবে। গুডবাই।গুডবাই রক্তি।রনির কাছ থেকে রক্তি কম্পিউটার সম্বন্ধে অনেক কিছু জেনেছে। রনি একটা জিনিয়াস, কম্পিউটারের এমন কোন নারী নক্ষত্র রনির অজানা। ও সবে মাত্র ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে কিভাবে এরকম অসম্ভবকে সম্ভব করল। রনির কথা মনে পড়তেই কম্পিউটারের সামনে গিয়ে বসল। পিসি অন করার কিছুক্ষণ পরেই রনির সঙ্গে ওর যোগাযোগ হয়েগেল। কি ব্যাপার রনি তুমি কি সবসময়ই কম্পিউটারের সামনে বসে থাক।না, তা কেন হবে।তাহলে আমি কম্পিউটার অন করতেই তুমি কি ভাবে আমার সামনে চলে আসলে।সেটাইতো প্রশ্ন। মজা করোনাতো আসল ব্যাপারটা বল।আসল ব্যাপার হলো আমি একটা সফটওয়্যার তৈরী করেছি। কেউ যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় তাৎক্ষণিক আমার ল্যাপটপ আমাকে সংকেত দেয়। ভয়েজ এলার্টের মাধ্যমে জানতে পারি কে যোগাযোগ করতে যাচ্ছে। আমার ইচ্ছা হলে যোগাযোগ করি আর না হলে রিসিভ করি না।ও এই জন্যই তুমি মোবাইল ব্যবহার করনা।আর কিছু দিন অপেক্ষা কর তখন আমি তোমার সামনে স্বশরীরে উপস্থিত হব।কিভাবে?যখন উপস্থিত হব তখন দেখতে পাবে, আগে বলা যাবে না।ঠিক আছে পরে আবার কথা হবে আমার স্বামী আসবে, এখন রাখি।ঠিক আছে গুড নাইট।গুড নাইট বলে সংযোগ বিছিন্ন করল রনি।কিছুক্ষণ পরে রাব্বি এসে বলল কি ব্যাপার আজ কয়েক দিন হল দেখছি, তুমি আর ঘুমকাতুরে রানি নেই। হটাৎ এই পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব হল। তুমি যেমন ব্যস্ত থাক তেমনি আমিও নতুন করে কম্পিউটার শিখছি। তাই রাত জেগে কাজ করি।তুমি কম্পিউটার ব্যবহার করতে পার।মনে হয় তুমি আকাশ থেকে পরলে। আমি কি অশিক্ষিত নারী যে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারব না।তা ঠিক নয়, কম্পিউটার কেনার পর তো কোনদিন তোমাকে কম্পিউটারের সামনে বসাতে পারলাম না তাই। শুধু গান শোনা ছাড়া কম্পিউটার যে অন্য কোন কাজে লাগে তা তুমি বুঝতেই চাওনি।আসলেই কম্পিউটারের ভিতরেই সারা দুনিয়া বন্ধি হয়ে গেছে। সকল ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের ছোঁয়া আধুনিকতার চরম পর্যায়ের নিয়ে গেছে।আর এই পর্যায় মানুষ উঠে পড়েছে যে আধুনিকতা আরেক ধাপ শিঁড়ি হয়ে যেতে পারে। যাকে পিছনে ফেলে মানুষ সামনের পানে এগিয়ে যাবে।না আমি তা মেনে নিতে পারিনা কারণ আধুনিকতা ব্যাপক আর বিশাল তা শেষ হবে না কখন।তুমি আধুনিক যুগে জন্মগ্রহণ করেছো বলে এরকম মনে হচ্ছে। তোমার মা-দাদীরাও তাদের যুগ শেষ হবেনা মনে করেছিল তাই বলে কি তাদের যুগ শেষ হয়ে যায়নি।তাদের যুগ শেষ হলেও আমাদের আধুনিকতার কখনো শেষ নেই। হয়ত বর্ধিত কলেবরে আমাদের সামনে হাজির হবে বার বার। তাই বলে আধুনিকতার সমাপ্তি সম্ভব নয়।আচ্ছা বাবা তোমার কথাই মেনে নিলাম। আমাকে খেতে দাও খিদে লেগেছে।চল, আমিও খাইনি আজ দু’জনে একসঙ্গে খাব।সময় অল্প অল্প করে দ্রুত বয়ে চলে যেন উড়ন্ত মেঘ। থামার কোন গন্তব্য নেই শুধু উড়েই চলেছে অপার নীলে। তার গতি অসীমে মিলিয়ে যেতে চায়। দেখতে রনি অনার্স পাস করে মাষ্টার্সে ভর্তি হয়েছে। রক্তির সংসারে ফুটফুটে গোলাপের মত সুন্দর একটা বাবু এসেছে। কিন্তু তাতেও রনির সঙ্গে তার সম্পর্কের কোন ঘাটতি হয়নি। রনির সঙ্গে এখনও ঘুরতে যায়, মাঝে মধ্যে বিশ্বরোড ধরে মহস্থান গড়ে যায়। বেহুলার বাসর ঘরের সামনে বশে আড্ডা দেয়। রনি যেন পাগলের মত টানে তার সাথে দিনে একবার কথা না বলে থাকতে পারে না। কিন্তু তাকে কিরকম ভালবাসে তা বোঝার উপায় নাই। কারণ রক্তি যখনই রনিকে ডাকে তখনই রনি উপস্থিত হয়ে তার ভালবাসার প্রমাণ দিয়েছে। বিবাহিত যেনেও রনি তার প্রতি উদাস নয়। তাকে উদার মনে মেনে নিয়েছে এবং প্রেমিকের মতই আচরণ করে।আচ্ছা রনি আমাদের সম্পর্ক তো অনেক দিন হল এখন কিছু কি ভাবছো না আমাকে নিয়ে।অবশ্যই ভাবি, তোমার সংসার আছে সুন্দর একটা বাবু আছে। ভালবাসার মানুষ আছে তোমার টাকা পয়সাও যথেষ্ট আছে।তুমি শুধু আমার বাহিরের অবস্থা দেখলে ভিতরের মানুষটাকে বুঝতে পারলে না।কে বলেছে বুঝিনি। তুমি ঘোর আধুনিকা আর সেই রূপের কাছে সবকিছুই পরাস্ত। এমন কি ভালবাসাও। তুমি কাউকেই ভালবাসতে পারো না। আধুনিক ভালবাসার অন্তরায় হয়ে দাড়াবে।তুমি কি আধুনিকের বাইরে।আমি আধুনিকতার বাইরের একজন মানুষ হতে চাই সবসময়। সেই ছোট বেলা থেকেই আমি সেই স্বপ্নই দেখে আসছি। সেই স্বপ্নেরই প্রতিফলন ঘটাবো বাস্তবে। যদি ততদিন আমি বেঁচে থাকি আর না থাকি। আধুনিক যুগের অবসান আমি ঘটিয়েই যাব। তা যে কোন কিছুর মূল্যেই আমি সম্ভব করে তুলব। আর সেই স্বপ্নকে সফল করার জন্যই আমি কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়াশুনা করছি।তুমি আমাকে হারাবে যেনেও আধুনিকতার বিরোধীতা করবে।তোমার মন মানসিকতা যদি আধুনিকতার নাগপাশ থেকে বের হতে না পারে তাহলে, আমি বাধ্য। তোমাকে যে খুব ভালবাসি আবার আমার যুগকেও আমি ভালবাসি।যে কোন একটাকে তোমার বেছে নিতে হবে হয় আমি না হয় তোমার যুগ।ঠিক আছে আজ থেকে তোমার সাথে আমার সম্পর্কের এখানেই ইতি। আর কখনও তোমার সাথে আমার দেখা হবেনা। এই বলে রাগ করে রক্তি ঝড়ের বেগে স্থান ত্যাগ করল।বাসায় গিয়ে রক্তির মাথার মধ্যে রনির ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা চলছে। ধরাবাধা নিয়ম আর ব্যাপরোয়া স্বাধীনতা তার জীবনকে এক ঘেয়েমী করে দিয়েছে। জীবনে কোন বৈচিত্র্যতা নাই, নাই আনন্দ, কোন রকমে মাকড়সার জালে মশা যেমন ঝুলে থাকে ঠিক তেমনি করে ঝুলে আছে জীবনটা। কোন সময় যে মাকড়সা এসে জীবনটাকে গ্রাস করবে সেই অপেক্ষাতে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হবে। আসলে মানুষ স্বাধীন হওয়ার ভান করে স্বাধীন আসলে কি কখনো মানুষ হতে পারে। পূর্ণ স্বাধীন হলে তো প্রকৃতি সৃষ্টি জগত থেকে বিছিন্ন হয়ে যেত। রক্তি তা ধীরে ধীরে অনুধাবন করতে পারে তার মন আরও আধুনিক হয়ে উঠতে চায়। কিন্তু এখনও তো আধুনিক যুগই চলছে। এখন সবাই মোবাইল ব্যবহার চিঠি লেখা সেই কবেই ভুলে গেছে। বেশী জরুরী হলে ই-মেইলের মাধ্যমে চিঠি পত্র আদান প্রদান করে। গ্রাম গঞ্জেও ইন্টারনেট, ডিশের লাইন পৌঁছে গেছে। যার সুযোগ সুবিধা গ্রামের কৃষকরা পর্যন্ত ভোগ করছে। তাহলে কি আধুনিক যুগের সকল প্রাপ্তিই কি শেষ হয়ে গেছে। তাহলে আমার মনে এই ব্যকুলতা কেন। না পাওয়ার একটা হাহাকার গ্রাস করে রেখেছে। তারপরেও আধুনিক যুগের পরিসমাপ্তি আমি দেখতে চাইনা। এই যুগের সমাপ্তির সাথে সাথে আমার অস্তিত্বও শেষ হয়ে যাবে তা কখনই হতে দেওয়া যাবে না। যেকোন উপায়েই রনিকে আটকাতে হবে।কলিং বেলের সুরেলা শব্দে জানান দিল কেউ একজন এসেছে। দরজা খুলে দিতে দেখতে পেল রনি।কি ব্যাপার রনি। কি মনে করে তোমার সাথে সম্পর্ক না চুকিয়ে দিয়ে আসলাম।তারপরেও আমি ব্যাহায়ার মত আসলাম সেই সম্পর্ক জোড়া লাগাতে। তুমি কি এখন আমাকে দরজা থেকে তাড়িয়ে দিতে চাও। না ভিতরে আসতে বলবে।ভিতরে আস। তুমি বস আমি কফি তৈরী করে নিয়ে আসি। বাবুর সাথে খেলা কর অথবা টিভি দেখ।ঠিক আছে তুমি যাও।রনি চোখে মুখে আধুনিক যুগের পতনের স্বপ্ন খেলা করে। আর সেই কথা জানাতেই রক্তির কাছে এসেছে। তার আগে ছোট্ট এক্সপেরিমেন্ট চালাবে কার উপর। শেষে রক্তির ছেলের উপর তার এক্সপেরিমেন্ট চালায়। তার জিনেটিক কোড পরিবর্তন করে দিতে ন্যানো কম্পিউটার রক্তির বাচ্চার শরীরের পুস করে দেয়। এখন এই বাচ্চার শরীরের হৃদপিন্ড থেকে প্রতিটি শিরায় শিরায় ন্যানো কম্পিউটার ঘুরে বেরাবে আর সেভাবেই প্রোগ্রাম সেট করা আছে। রনির স্বপ্ন বাচ্চাটির মাধ্যমে বেড়ে উঠবে সকলের অগচরে। এর ভিতরেই রক্তি কফি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে।রনি তোমার কাছে আমার শেষ অনুরোধ সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার আগে তুমি আমাকে একটা কিস করবে প্লিজ। কফি কাপে চুমুক দেয়ার আগে।ঠিক আছে বলে রনি মুখ বারিয়ে দিতেই গোলাপি ঠোটের নোনতা স্বাদ তার জিভে লেগে যায়। রক্তি যেন ছারতেই চায় না। যদি এ ভাবে রনিকে সারা জীবন ধরে রাখা যেত। ঝারা দুই মিনিট তারা জোড়াবদ্ধ হয়ে থাকে। বাবুর কান্নায় বাস্তবে ফিরে আসে। রনি কফির কাপে চুমুক দিয়েই হাসি মুখে বলে তুমি দ্রুত আর আমি দ্রুতগতীসম্পন্ন তাই তোমার থেকে আমি ༯p>

No comments:

Post a Comment

Bijoy 2023